দালালের বিশেষ চিহ্ন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে চরম ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা। বিশেষ সংকেত ব্যবহৃত আবেদনকারীরাই খুব দ্রত সময়ে ছবি তোলা ও পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে যথাসময়ে। তবে এ জন্যগুনতে হয় বাড়তি অর্থ।নগরির মনসুরাবাদস্থ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে নিত্যদিনের চিত্র হল এ বিষয়টি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন নগরের ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকায় অবস্থিত বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয় ঘুরে এবং আবেদনকারী ও সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। দালালদের উৎপাত ও বাড়তি টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. আবু সাঈদ বিডি সংবাদকে বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয়ে কোন দালাল নেই। দালালদের বাড়তি টাকা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট নিচ্ছে বলেও আমার জানা নেই।
সূত্র জানায়, জরুরি ও সাধারণ দুই ধরনের পাসপোর্ট করা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে। জরুরি পাসপোর্টের জন্য সরকারি ফি ৬ হাজার টাকা এবং সাধারণ পাসপোর্টের সরকারি ফি ৩ হাজার টাকা।ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে রসিদ পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর তোলা হয় ছবি। এরপর পুলিশের মাধ্যমে যাচাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছেন আনসার সদস্য রেজাউল করিম। এ সময় সেখানে যান নগরির বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা সোহেল । তিনি সাধারণ পাসপোর্ট করতে চান জানতে পেরে রেজাউল বলেন, সব করে দিব।সোহেল জানতে চান, কত টাকা লাগবে। রেজাউল বলেন, পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা দেবেন। আপনাকে কিছুই করতে হবে না। শুধু ছবি তুলে চলে যাবেন। এত টাকা কেন সোহেল প্রশ্ন করতেই রেজাউলের জবাব, পরিচালক সাহেবের পিএর মাধ্যমে করাব এ পাসপোর্ট। কোনো অসুবিধা হবে না। তিন হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেব। দেড় হাজার টাকা অফিস খরচ। বাকিটা ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশকে দিতে হবে। তবে টাকা জোগাড় করে পরে আসবেন জানিয়ে চলে যান সোহেল। এরপর রেজাউলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় হাটহাজারীর লাঙ্গলমোড়া থেকে আসা যুবক মুরাদকে। তিনি বলেন, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় রেজাউলের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। ছবি তোলা হয়েছে। পাসপোর্ট কবে পাব জানতে এসেছি।বাড়তি টাকা কেন দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজে ফরম পূরণ করে জমা দিলে নানা ভুলত্রুটি ধরে। দু-তিন দিন পরে ছবি তুলতে হয়। বাড়তি টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়। মুরাদ চলে যাওয়ার পর বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন রেজাউল। তিনি বলেন, মানুষ এলে তাদের সাহায্য করি।আরও কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে কথা হয় সন্দ্বীপের মো. খুরশেদ ও খুলশী এলাকার ভুক্তভোগী রফিকুল আলমের সাথে। দুজনেরই অভিযোগ, তাঁরা নিজেরা আবেদনপত্র জমা দিতে গেলে তা নেওয়া হয়নি। পরে দালালের মাধ্যমেআবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।খুরশেদ, রফিকুল ও কায়েসসহ আরও কয়েকজন আবেদনকারী জানান, দালালেরা যেসব আবেদনপত্র জমা দেয় তাতে তারা বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করে। যেমন ইংরেজি ও বাংলা বর্ণমালার কোনো একটি বর্ণ বা নির্দিষ্ট কোনো স্থানেটিক চিহ্ন ইত্যাদি। এসব চিহ্ন দেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুঝে ফেলেন যে আবেদনপত্রটি তাদের চিহ্নিত দালালের মাধ্যমে এসেছে।
জানা গেছে, বছর খানেক আগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ের ৬৫ জন দালালের একটি তালিকা তৈরি করে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালিকাটি পাঠানো হয় পুলিশের কাছে।এরপর কয়েকজনকে আটক করা হলেও উৎপাত কমেনি দালালের।
ভুক্তভোগীরা জানান, চট্টগ্রাম পাসপোর্ট কার্যালয়ে শতাধিক দালাল রয়েছে। যারা সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা আদায় করে চুক্তিতে পাসপোর্ট করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া কম সময়ে পাসপোর্ট পেয়ে যায় গ্রাহকরা।
হয়রানির শিকার হয় দালালের বিশেষ চিহ্নবিহীন আবেদনকারীরা।
পাঠকের মতামত: